for Add
বিশেষ সংবাদদাতা : ১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ১৫:০৯:৩০
বিকেল চারটায় কুমিল্লার ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আবাহনী ও ফর্টিস এফসির লড়াই শুরু হতেই মতিঝিলের মোহামেডান ক্লাবে নিজ কক্ষে ল্যাপটপ খুলে ম্যাচের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আলফাজ আহমেদের। সাথে ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব।
আগের দিন চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে জয়ের পরই শিরোপার দ্বারপ্রান্তে চলে যায় মোহামেডান। বাকি তিন ম্যাচ থেকে দরকার ছিল ৩ পয়েন্ট। আবার শনিবার আবাহনী হারলে আর কোনো পয়েন্টই প্রয়োজন নেই। তাইতো কুমিল্লায় ফর্টিসের জয়ই ছিল মোহামেডান কোচের একমাত্র চাওয়া।
কিছু সময় খেলা হওয়ার পর বজ্রপাত শুরু হলে রেফারিকে বন্ধ রাখতে হয় ম্যাচ। চিন্তায় কপালের ভাঁজ মোটা হতে থাকে মোহামেডান কোচ আলফাজের। কিছু সময় পর খেলা শুরু হয় এবং প্রথমার্ধেই গোল করে এগিয়ে যায় ফর্টিস। মতিঝিলের মোহামেডান ক্লাবে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় তখনই।
পেনাল্টি থেকে ওমর বাবুর গোলে লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে ফর্টিস। ৭৭ মিনিটে সাজেদ হাসান জুম্মনের গোলে ফর্টিস যখন ব্যবধান ২-০ করেন তখন নিজেদের কক্ষ থেকে বের হতে থাকেন মোহামেডানের খেলোয়াড়রা।
কক্ষের সামনেই তখন মোবাইলে ডুবে ছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক মালির সোলেমান দিয়াবাতে। সাথে ছিলেন ক্লাবের আরেক বিদেশি বুরকিনা ফাসোর মুনজির কুলদিয়ানি। ততক্ষণে মোহামেডান ক্লাবে ভীড় জমিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
‘হাই দিয়াবাতে’- বলে অনেকে মোহামেডান অধিনায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেও মোবাইল থেকে চোখ তুলছিলেন এই মালির স্ট্রাইকার। মোহামেডানের ঘরের ছেলে হয়ে যাওয়া দিয়াবাতের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা তখন।
হাতাহাতি করে ফর্টিসের মনজুর রহমান লালকার্ড পেলে ১০ জনের দলের পরিণত হয় এগিয়ে থাকা দলটি। সেই সুযোগে ৭৭ মিনিটে ইয়াসিন খানের গোলে ব্যবধান কমায় আবাহনী। মোহামেডান ক্লাবে তখন পিনপতন নিরবতা। ১০ জনের ফর্টিস কি ২-১ গোলে লিডটা ধরে রাখতে পারবে?
টেনশন মোহামেডানের খেলোয়াড়, কোচ ও সমর্থকদের। খেলা ইনজুরি সময়ে গড়ালে ৫ মিনিটের সঙ্কেত দেন চতুর্থ রেফারি। অপেক্ষা বাড়তে থাকে মোহামেডানের। তখন ক্লাব প্রাঙ্গণে শুরু হয় ক্ষণ গননা। আর ৫ মিনিট, আর ৪ মিনিট। এভাবে ৩, ২, ১, ০ এর পর আরো কয়েক সেকেন্ড খেলা চললো।
কুমিল্লার মাঠে রেফারি যখন লম্বা বাশি বাজিয়ে খেলা শেষ করলেন তখন উল্লাসে ফেটে পড়লো ঢাকার মতিঝিলের মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গন। ৯৫ মিনিট পর উঠে দাঁড়ালেন দিয়াবাতে, জড়িয়ে ধরলেন মনজুর কুলদিয়ানিকে। মুহূর্তের মধ্যে সমর্থকরা দিয়াবাতেকে ঘিরে ধরে স্লোগান তুললেন মোহামেডান…, মোহামেডান।
আবাহনীর হারে ১৫ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগের শিরোপা নিশ্চিত হলো মোহামেডানের। কুমিল্লার ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উচ্ছ্বাস বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়লো দেশজুড়ে মোহামেডান সমর্থকদের মধ্যে।
২০০৭ সালে পেশাদার লিগ শুরু হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ৬ বার শিরোপা ধরে তুলেছে, ২০১৮ সালে শীর্ষ লিগে নাম লিখিয়ে বসুন্ধরা কিংস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৫ বার। ৩ বার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, ১ বার শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। অথচ দেশের ফুটবল ইতিহাসে অনেক কীর্তি গড়া মোহামেডানের ঘরে নেই পেশাদার লিগের শিরোপা।
লিগ আসে লিগ যায়, শূন্য থাকে মোহামেডানের প্রাপ্তির খাতা। ক্লাবে এত ট্রফি। তারপরও বড় শূন্যতা ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ছুঁতে না পারায়। দীর্ঘ ১৮ বছরে তাদের অর্জন ছিল চারবার রানার্সআপ হওয়া। দেড় যুগ অপেক্ষার পর সোনার হরিণ হয়ে যাওয়া পেশাদার লিগের ট্রফি ধরা দিলো সাদাকালোদের হাতে। শনিবারের সন্ধ্যাটা রঙিন হলো মতিঝিলের ক্লাবটিতে।
পেশাদার লিগ প্রবর্তনের আগে শীর্ষ আসর ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। ২০০২ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল মোহামেডান। দীর্ঘ ২৩ বছর পর তাদের ঘরে গেলো আরেকটি লিগের শিরোপা। মোহামেডানের শিরোপা জয়ে শেষ হলো এবারের ঘরোয়া ফুটবলের সব আকর্ষণ। তিনটি ট্রফির মধ্যে দুটি গেছে বসুন্ধরা কিংসের ঘরে, একটি পেলো মোহামেডান। শূণ্যহাতে শেষ হতে যাচ্ছে আবাহনীর আরেকটি মৌসুম।
For add
For add
For add
For add
for Add