for Add
বাসস : ২৮ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১:৩১:৫৯
ব্যাটারদের ব্যর্থতায় চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। বৃধবার সুপার টুয়েলভে গ্রুপ : ১ -এর ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছিল মাহমুদুল্লাহর দল।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৩৫ বল বাকী রেখেই সহজ জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল ইংলিশরা। তাই ২ খেলা শেষে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট ইংলিশদের। সমানসংখ্যক ম্যাচে ২ হারে এখনো পয়েন্টের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
আবু ধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। একটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় টাইগাররা। ইনজুরিতে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের পরিবর্তে সুযোগ পান পেসার শরিফুল ইসলাম।
ব্যাট হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারের ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলির শেষ দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন ওপেনার লিটন দাস। তাই শুরুটা মারমুখী মেজাজেই করেছিলেন লিটন।
তবে তৃতীয় ওভারে লিটনকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মঈন। সুইপ শট স্কয়ার লেগে লিয়াম লিভিংটকে ক্যাচ দেন ৮ বলে ৯ রান করা লিটন।
একই ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনের আউটের পর পরের বলে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইম। ৭ বলে ৫ রান করেন তিনি। এতে ১৪ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
দুই ওপেনারের বিদায়ে ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম দলকে বিপদমুক্ত করেন। তবে জুটিটা বড় করতে পারেননি তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পেসার ক্রিস ওকসের বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন সাকিব। শর্ট ফাইন লেগে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন আদিল রশিদ। ফলে ৭ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সাকিব।
দলীয় ২৬ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে সাকিবকে হারানোয় চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বড় জুটির প্রত্যাশায় ছিল টাইগাররা। সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টায় ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
উইকেট ধরে খেলে রানের গতি বাড়ান মুশফিক-রিয়াদ। তাই পাওয়ার প্লেতে যেখানে রান ছিল ৩ উইকেটে ২৭ রান। ১০ ওভার শেষে রান রেট গিয়ে দাঁড়ায় ৬ এ। অর্থাৎ ১০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৬০ রান পায় বাংলাদেশ।
মুশফিক-রিয়াদ উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ায় তাদের হাত ধরেই ভাল অবস্থায় যাবার স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু মুশফিক-রিয়াদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান অকেশনাল স্পিনার লিভিংস্টোন। ১১তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসে মুশফিককে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বিপদে পড়েন মুশি। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি মুশফিক। ৩টি চারে ৩০ বলে ২৯ রান করে ফিরেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়কের সাথে ৩২ বলে ৩৭ রান যোগ করেন তিনি। এমন অবস্থায় দলের স্কোর ৪ উইকেটে ৬৩ রান।
মুশফিকের আউটের পর শতরানের পা দেয়ার আগে আরও গুরুতপূর্ণ ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন ৫ ও রিয়াদ ১৯ রান করে লিভিংস্টোনের দ্বিতীয় শিকার হন। ২৪ বল খেলে ১টি চার মারেন রিয়াদ। ২টি চারে ইনিংস শুরু করা মাহেদি হাসান ১১ রানের বেশি করতে পারেননি।
মাহেদির আউটের পর বাংলাদেশের ইনিংসে ১৭ বল বাকী ছিল। তখন স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ছিলেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। নুরুলের ব্যাটে চার-ছক্কার আশায় ছিল দল। কিন্তু পারেননি নুরুল। পেরেছেন আরেক প্রান্তে থাকা নাসুম।
১৯তম ওভারে মঈনকে দু’টি ছক্কা ও একটি চার মারেন নাসুম। ঐ ওভার থেকে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ।
আর শেষ ওভারের শেষ দুই বলে নুরুল ও মুস্তাফিজুর রহমানকে শিকার করে বাংলাদেশ স্কোর ১২৪ রানের বেশি যেতে দেননি ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার টাইমাল মিলস।
১৮ বলে ১৬ রান করেন নুরুল। ৯ বলে ১৯ রান তুলে অপরাজিত থাকেন নাসুম।
ইংল্যান্ডের মিলস ৩টি, মঈন-লিভিংস্টোন ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেটে সাকিবের করা প্রথম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে চার মারেন ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়। আর দ্বিতীয় ওভারের শেষ দুই বলে মুস্তাফিজের বলে চার আদায় করেন রয়।
তৃতীয় ওভারে সাকিবকে ছক্কা ও চতুর্থ ওভারে শরিফুলকে চার মেরে দ্রুত রান তুলতে থাকেন আরেক ওপেনার জশ বাটলার। এতে ৪ ওভার শেষে ৩৭ রান পায় ইংল্যান্ড।
প্রথম চার ওভারে তিন বোলার ব্যবহারের পর পঞ্চম ওভারে স্পিনার নাসুমকে আক্রমণে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। বল হাতে নিয়ে পঞ্চম ডেলিভারিতে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাসুম। এক্সট্রা কভারে ১৮ বলে ১৮ রান করা বাটলারের ক্যাচ নেন নাইম।
পাওয়ার প্লেতে বাটলারকে হারলেও ৫০ রান পায় ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লে শেষ হবার পরও মারমুখী ছিলেন রয়। এতে ১২তম ওভারেই শতরান স্পর্শ করে ইংল্যান্ড। নাসুমের করা ঐ ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে দলের রান তিন অংকে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ৩৩ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রয়।
১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুলকে ছক্কা মারার পর পঞ্চম বলে বিদায় নেন রয়। ৩৮ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ৬১ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে মালানের সাথে ৪৮ বলে ৭৩ রান তুলেন রয়। সেখানে তার অবদান ছিল ২৭ বলে ৪৪। আর মালান করেছিলেন ২১ বলে ২২।
রয় যখন ফিরেন, তখন ম্যাচ জিততে ১৩ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন মালান ও জনি বেয়ারস্টো। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে শরিফুলকে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন তারা।
মালান ৩টি চারে ২৫ বলে অপরাজিত ২৮ এবং বেয়ারস্টো ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের শরিফুল-নাসুম ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন রয়।
আগামী ২৯ অক্টোবর গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আর ৩০ অক্টোবর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
স্কোর কার্ড : (টস- বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন ক লিভিংস্টোন ব মঈন ৯
নাইম ক ওকস ব মঈন ৫
সাকিব ক রশিদ ব ওকস ৪
মুশফিকুর এলবিডব্লু ব লিভিংস্টোন ২৯
মাহমুদুল্লাহ ক ওকস ব লিভিংস্টোন ১৯
আফিফ রান আউট (মিলস/বাাটলার) ৫
নুরুল হাসান ক বাটলার ব মিলস ১৬
মাহেদি হাসান ক ওকস ব মিলস ১১
নাসুম আহমেদ অপরাজিত ১৯
মুস্তাফিজুর রহমান বোল্ড ব মিলস ০
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-১, ও-৫) ৭
মোট (৯ উইকেট, ২০ ওভার) ১২৪
উইকেট পতন : ১/১৪ (লিটন), ২/১৪ (নাইম), ৩/২৬ (সাকিব), ৪/৬৩ (মুশফিক), ৫/৭৩ (আফিফ), ৬/৮৩ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/৯৮ (মাহেদি), ৮/১২৪ (নুরুল), ৯/১২৪ (মুস্তাফিজ)।
ইংল্যান্ড বোলিং :
মঈন : ৩-০-১৮-২,
ওকস : ৪-০-১২-১,
রশিদ : ৪-০-৩৫-০,
জর্ডান : ২-০-১৫-০ (ও-৩),
মিলস : ৪-০-২৭-৩ (ও-১),
লিভিংস্টোন : ৩-০-১৫-২।
ইংল্যান্ড ইনিংস :
রয় ক নাসুম ব শরিফুল ৬১
বাটলার ক নাইম ব নাসুম ১৮
মালান অপরাজিত ২৮
বেয়ারস্টো অপরাজিত ৮
অতিরিক্ত (লে বা-৬, ও-৫) ১১
মোট (২ উইকেট, ১৪.১ ওভার) ১২৬
উইকেট পতন : ১/৩৯ (বাটলার), ২/১১২ (রয়)।
বাংলাদেশ বোলিং :
সাকিব : ৩-০-২৪-০ (ও-২),
মুস্তাফিজ : ৩-০-২৩-০ (ও-১),
শরিফুল : ৩.১-০-২৬-১ (ও-১),
নাসুম : ৩-০-২৬-১,
মাহেদি : ২-০-২১-০ (ও-১)।
ফল : ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : জেসন রয় (ইংল্যান্ড)।
For add
For add
For add
For add
for Add