for Add
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২ মে ২০১৬, সোমবার, ১৯:১১:০৮
চেয়ারটি তার খুবই চেনা। গত ৮ বছর এ চেয়ারে বসেই নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশের ফুটবলের। পরিচিত সে চেয়ারে আজ (সোমবার) যখন বসলেন তখন কাজী মো. সালাউদ্দিনের মনে নিশ্চয়ই অন্যরকম শিহরণ ছিল। কারণ, এবার যে অনেক প্রতিকূলতা ঠেলে এ চেয়ারটির অধিকার ধরে রাখতে হয়েছে এ কিংবদন্তী ফুটবলারকে। টানা তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিনের প্রথম দিন বাফুফে ভবনে আগমন ছিল উৎসবমুখর। সকালে পুরো কমিটি নিয়ে ধানমন্ডি গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে। সেখানে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাফুফের নবনির্বাচিত কমিটি যায় বনানী কবরস্থানে। সেখানে ১৫ আগষ্টে শহীদ হওয়া শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। তারপর বিকালে আসেন বাফুফে ভবনে।
তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেছেন, তিনি তার শেষ মেয়াদে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবেন। জেলা, ক্লাব ও জাতীয় দলের উন্নয়ন তার প্রথম লক্ষ্য। প্রথম দিন অফিস করে কাজী মো. সালাউদ্দিন যে সব বিষয়ে কথা বলেছেন তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
নারী ফুটবলে সাফল্য প্রসঙ্গে
ফুটবল তো ২০৯ দেশ খেলে। চারটা-পাঁচটা দেশ খেলে না যে এটা খুবই সোজা কাজ। আমরা কাজ আরম্ভ করেছি অনেক আগের থেকেই। চেষ্টা করছি ডেভেলপমেন্টের। তবে সময় নেবে। আজকেই আপনারা জেনেছেন আমাদের মেয়েরা অনুর্ধ্ব-১৪ দল সেন্ট্রাল এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। এরকম অনুর্ধ্ব-১৬ ছেলেরাও হয়েছে। আমরা যে কাজগুলো শুরু করেছি তার রেজাল্ট আপনারা দেখতে পাবেন। দুই চারজন যদি না জেনে টিভিতে টক-শো করে ফুটবল ফেডারশনকে ব্যর্থ নাজিল করে তা দুর্ভাগ্যজনক। আপনারা অপেক্ষা করেন। এখানে যাদের দেখছেন তারা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজার, ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল প্লেয়ার। এ সেক্টরে কাজ করার আমাদের চেয়ে আগ্রহ কারো বেশি নেই, অভিজ্ঞতাও কারো বেশি নেই। আমাদের আগ্রহই ফুটবল। ফুটবল আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমাদের সঙ্গে যে লোকগুলো বিজয়ী হয়েছেন তাদের এক একজনের ২০-২২ বছরের অভিজ্ঞতা। আপনারা রেজাল্ট দেখবেন। আমরা এখানে এসেছি কাজ করতে। কারণ আমরা ফুটবলকে ভালোবসি। আমি দেশের ফুটবলকে অনেক উপরে নিতে চাই। যেখানে একটা প্লেয়ারের বেতন ৪ কোটি টাকা সপ্তাহে হতে পারে ওই খেলাটাকে উপরে নেওয়া কস্ট আছে। আবার আমি বিশ্বাস করি সবাই যেহেতু আমাদের সমর্থন করছে তাই যদি আমরা কাজ করি তাহলে এই যে মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এমন অনেক খবর দিতে পারবো।
মেয়েদের ফুটবলটা এখনো বিশ্বে ওই লেভেলে যায়নি, যে লেভেলে পুরুষ ফুটবল আছে। তাই যদি আমরা যদি মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করি তাহলে সাফল্য পাওয়াটা পুরুষ ফুটবলের চেয়ে সহজ হবে।
জাতীয় দল ও নতুন বিদেশি কোচ প্রসঙ্গে
শেষ কয়েকটি মাস ফুটবলের নির্বাচন নিয়ে যে নাটক হয়েছে তাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম না ভোটাররা আমাকে আনবে কি আনবে না। আমি যদি না আসতে পারি এবং কোচ এবং অন্যান্য বিষয়ে আগেভাগে কাজ করাটা বিফলে যাবে। কোচ নিয়ে আমার কিছু প্লান আছে যা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবো। দুই দিন আগে আমি সভাপতি ছিলাম না। তাই কোনো কোচের সঙ্গে আলোচনা করিনি। আজ সভাপতি, আলোচনা শুরু করবো।
জেলা ফুটবল প্রসঙ্গে
ডিস্ট্রিক ইজ স্পেশাল। তাই বলে এমন স্পেশাল নয় যে ক্লাবগুলোকে ফেলে দেবো। জেলা এবং ক্লাবগুলোর মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে। তা নাহলে ফুটবলের উন্নয়ন হবে না। আমি যদি কেবল জেলা নিয়েই থাকি তাহলে সেখান থেকে ভালো খেলোয়াড় বের হলে কোথায় যাবে যদি ঢাকায় খেলা না থাকে। তাই আমাকে দুটি নিয়েই কাজ করতে হবে। ৪৭ টি জেলায় লিগ সম্পন্ন হয়েছে। যারা করতে পারেনি হয় তাদের মাঠের সমস্যা ছিল, না হয় সাংগঠনিক সমস্যা ছিল। তবে করবে। একদিনই যে সব হয়ে যাবে তাতো না।
অগ্রাধিকার
আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম তার পুরোটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। তবে যদি অগ্রাধিকারের কথা বলেন আমি উল্লেখ করবো তিনিট বিষয়। জেলা, ক্লাব ও জাতীয় দল। এটা আমার ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার। তবে দেশের গোটা ফুটবলের উন্নয়ন করতে হলে ইশতেহারের যা দেওয়া হয়েছে তা কাভার করতে হবে। স্কুল টুর্নামেন্ট, একাডেমি সবগুলোই কাভার করবো। তবে ফুটবলের প্রকৃত সাফল্য আসবে ক্লাব ডেভেলপমেন্টস, জেলা ডেভেলপমেন্টস ও জাতীয় দল। এগুলোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন-যখন ৮ বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন খেলা হতো না। এটাতো সত্য কথা। এখন খেলা হয় না বলতে পারবেন না। বলতে পারবেন সাম্প্রতিক জাতীয় দলের পারফরম্যান্সটা ভালো না। কিন্তু খেলাতো সব জায়গাই হচ্ছে। এ ধারাবাহিতকা ধরে রাখলে ফুটবল এমনিতেই উঠে আসবে। আমরা একটা স্টেজে চলে এসেছি। এখন ফাইনাল স্টেজে। এ চারবছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন। এমনিক বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যও।
চার বছরে বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থান
আমি যেটা দেখতে চাই আর যা হবে তার মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এবার শেখ জামাল ক্লাব এএফসি কাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে। আমি দেখতে চাই বাংলাদেশ যেন টপ এশিয়া কাপ খেলতে পারে। দ্বিতীয়ত সাংগঠনিক দারুন একটা ভিত্তি তৈরী করে দিয়ে যেতে চাই। কারণ যিনি পরবর্তীতে আসবেন তাকে যেন বেশি কস্ট না করতে হয়। আমাদের কর্মসূচিটা ফলো করলেই তিনি উন্নয়ন করতে পারবেন।
প্রতি জেলায় একাডেমি নির্মান প্রসঙ্গে
এটা একটা উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট। আমি যদি শুরু করি এবং সবগুলো জেলায় করতে না পারি, আমি যদি ২০ টা পারি ৩০ টা পারি তা কম কিসের। শুরু তো হলো। পুরোটা পারলে তো আলহামদুলিল্লাহ। শুরু তো করি। তার পর যিনি আসবেন তিনি করবেন।
৮ খেলোয়াড় প্রসঙ্গে
আটজন খেলোয়াড়ের বিষয়টি ঝুলে আছে তা নয়। একটি ক্লাব আদালতে গেছে। আদালত একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমার এখানে প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি যা বলবে সেটাই হবে। আদালতের লিখিত অর্ডার পাওয়ার পর প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেবে। আমার কোনো হাত নেই এখানে। কমিটি যদি মনে করে শেখ জামালের প্লেয়ার শেখ জামালকে দেবে, যদি মনে করে শেখ রাসেলের প্লেয়ার শেখ রাসেলকে দেবে। যদি মনে করে মোহামেডানের প্লেয়ার মোহামেডানকে দেবে। আমি কোনো হস্তক্ষেপ করবো না। আমি বলে দিয়েছি আইন অনুসরণ করতে।
স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন প্রসঙ্গে
আগেরবার আমি কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান মনোনীত করে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম পুরো কমিটি তৈরী করতে। এবার আমি পুরো কমিটিই তৈরী করবো। কারণ, এবার আমি পুরো দায়দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো। যদি কোনো কমিটি ব্যর্থ হয় তাহলে নতুন কমিটি করা হবে। সবাইকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। আয়েশ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি এমনভাবে কাজ করতে চাই যাতে কোনো মানুষ যেন আন্দাজে কথা-বার্তা না বলতে পারে।
ভিশন ২০২২ প্রসঙ্গে
এ বিষয়টি নিয়ে কম হলে ২২ বার বলেছি আপনাদেরকে। ২২ বার উত্তর দিয়েছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে আবার বলছি, আমাকে একটা ভিশন রাখতে হবে। আমি আবার বলছি, আমি মুসলমান। আমাকে যদি হজ্ব করতে হয় প্রথমে প্রথমে নিয়ত করতে হবে। তারপর রওয়ানা দিতে হবে। আমার হজ্ব করার ইচ্ছা, রওয়ানা দিয়েছি। এখন যেখানে গিয়ে পৌছতে পারি।
সবার শেষে কাজী সালাউদ্দিন তাকে তৃতীয়বার সভাপতি নির্বাচিত করায় কাউন্সিলরদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
For add
For add
For add
For add
for Add