for Add
মোরসালিন আহমেদ : ১৮ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ২০:১৪:২৩
চীনের উহানের রহস্যজনক নভেল করোনা ভাইরাস এখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে।প্রাণঘাতি এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাই এখন গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন।এ ভাইরাসের ছোবলে ধনী-গবীর কোন রাষ্ট্রই রেহাই পাচ্ছে না।বিনা যুদ্ধেই পুরোবিশ্ব এখন ‘লকড ডাইন’।তবুও এর বিস্তার ক্রমেই ব্যাপক আকার ধারণ করছে।বৈশ্বিক এ মহামারীতে প্রতিদিনই মৃত্যুের মিছিলের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।এর ফলে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।নিদারুণ প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বেরুতে সাহস পাচ্ছেন না।গত বছরের ডিসেম্বরে উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসটির অস্তিত্ব জানান দিলেও ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোন ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে পারেনি। শুরুটা হয় সর্দি-কাশি. জ্বর দিয়ে।এর পর শ্বাসকষ্ট।তারপর ধীরে ধীরে গোটা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত ছোঁয়াচে নভেল করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রতিটি দেশের নাগরিকই এক কথায় গৃহবন্দী।ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে নয়।এক সময়ের দাবাড়ুরা বিশ্বের এমন ক্রান্তিকালে প্রবাসী জীবনে কে কী ভাবে দিন কাটাচ্ছেন আর ‘প্রিয় বাংলাদেশ’ নিয়েই বা কী ভাবছেন এ নিয়েই প্রতিবেদনটি সাজানো হয়েছে।সুদূর আমেরিকা থেকে নিয়ামুল হক নিরু, কানাডা থেকে জ্যাকব মাহমুদ, স্পেন থেকে আবুল কাশেম ভূঁইয়া, ইংল্যান্ড থেকে শহিদুল ইসলাম হিরক, কানাডা থেকে সৈয়দা আফসানা পারভীন নীরা ও মালয়েশিয়া থেকে ফজলে নূর বাপ্পী জানিয়েছেন তাদের এ মুহূর্তের ভাবনাগুলো।
সৈয়দা আফসানা পারভীন নীরা (কানাডা) : দেশীয় ক্রীড়াঙ্গনে এক সময় চেস স্টাইলিস্ট হিসেবে খুবই পরিচিত মুখ ছিলেন সৈয়দা আফসানা পারভীন নীরা।তবে নীরা নামেই তাকে সবাই বেশি চিনতেন।সাবেক এ নারী দাবাড়ু দেশের হয়ে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডেও খেলেছেন।বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় করোনা পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। সবাই এটির ভয়াবহতা সর্ম্পকে সচেতন থাকায় দেশটিতে সেভাবে ছড়াতে পারেনি। এ পর্যন্ত ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।তিনি জানান, মিডিয়ার মাধ্যমে দেখলাম বাংলাদেশে কেউই ঠিক মতো লকড ডাইন মানছেন না। করোনা ভাইরাসটিকে আমলে নিচ্ছেন না। সিরিয়াস হচ্ছেন না।সরকারের গাইডলাইনও মানছেন না। যা অত্যন্ত দু:খজনক।এসব না মানার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।তাই প্রিয় বাংলাদেশ ভাল থাকুক।দূর থেকে সবসময়ই সেই প্রার্থনা করেন।দেশবাসীর কাছে তিনি সবিনয় অনুরোধ করেছেন, আপনারা কেউ বাসা থেকে বের হবেন না। নিজে সুস্থ থাকুন, পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।প্রিয় বাংলাদেশকে করোনা মোকাবিলায় সহায়তা করুন।
নিয়ামুল হক নিরু (আমেরিকা) : আমেরিকার নিউইয়র্কে সাবেক জাতীয় দাবাড়ু নিয়ামুল হক নিরু দুই যুগের বেশি বসবাস করছেন।বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুযোর্গের মুখোমুখি হলেও দীর্ঘ দিন বাসায় অবস্থান করা এই প্রথম অভিজ্ঞতা।সাবেক জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন নিরু বলেন, নিউইয়র্কের যে এলাকায় বসবাস করছি সেখানে করোনার প্রাদুভার্ব সেভাবে ছড়ায়নি। তবে নিউইয়র্কে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।তিনি জানান, বাসা থেকে একদমই বের হই না।সর্বোচ্চ সর্তক থাকার চেষ্টা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে জানালেন, দেশের জন্য খুবই চিন্তা হয়। নানাভাবে সবার খোঁজ রাখার চেষ্টা করেন। তার কাছে চীনের করোনা থেকে আমেরিকার করোনাকেই বেশি ভয়াবহ মনে করছেন।কেননা ইতোমধ্যেই দেশটিতে ৩৭,২৪২ লোক মৃত্যুবরণ করেছেন।
জ্যাকব মাহমুদ (কানাডা) : পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও নব্বই দশকে তিনি পুরোদস্তর একজন দাবাড়ু ছিলেন। ক্রীড়াঙ্গনেরও তিনি একজন পরিচিত মুখ। বেশকিছু কাল জাতীয় ফুটবল দলের নিয়মিত চিকিৎসক ছিলেন। এ সময়টা সবাই তাকে মাহমুদুল হক নামেই বেশি চিনতেন।বর্তমানে কানাডায় বসবাস করছেন।এর আগে তিনি আমেরিকায় ছিলেন।করোনা প্রসঙ্গে বলেন, এটি খুবই প্রাণঘাতি একটি ভাইরাস।কানাডা আগ থেকে সর্তকতা অবলম্বন করায় অন্য দেশের মত বেশি প্রাণহানি হয়নি। এ পর্যন্ত ১,৩১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।তিনি জানান, করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চলা দরকার। লকড ডাউন অবস্থায় কোন ক্রমেই বাইরে যাওয়া যাবে না।যতটা সর্তক থাকা যায় সবাইকে সেই চেষ্টা করতে হবে। অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, রোগ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যাদি গ্রহণ করা। তিনি জানালেন, ঘরবন্দী হয়ে পড়লেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখছেন। করোনার মোকাবিলা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।তারই একটি ম্যাসেজ ঘর থেকে কোন ক্রমেই বের হবেন না।
আবুল কাশেম ভূঁইয়া (স্পেন) : প্রিয় বাংলাদেশ এর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে খুবই চিন্তিত সাবেক জাতীয় দাবাড়ু স্পেনে বসবাসকারী আবুল কাশেম ভূঁইয়া।তিনি বলেন, ইউরোপ আর আমেরিকায় বয়স্ক বিশেষ করে ৭০ থেকে ৯০ বছরের লোকজন করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন।কিন্ত বাংলাদেশে দেখছি উল্টো চিত্র।বেশিরভাগই ইয়াং।যা উদ্বেগজনক। তিনি জানান, করোনায় বার্সেলোনাই বেশি প্রাণহানি হয়েছে।তবে তিনি যেখানে রয়েছেন অথার্ৎ ক্যালভিয়ায় খুব বেশি করোনার প্রাদুভার্ব নেই। লকড ডাউন কঠোর ভাবে পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাসায়ই অবস্থান করছেন। তিনি জানালেন, নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই অনলাইনে কেনাকাটা হচ্ছে বিধায় বাইরে বের হবার সুযোগ নেই। এ পর্যন্ত স্পেনে ২০,০০২ জনের মৃত্যু হয়েছে।প্রিয় বাংলাদেশ সর্ম্পকে জানালেন, মিডিয়ায় দেখলাম লোকজন লকড ডাউন মানছেন না। এভাবে চললে তো করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। তিনি মনে করেন এখনো সচেতন হলে মহামারী থেকে বাঁচা যাবে।কাজেই যত কষ্টই হোক না কেন দেশবাসীকে কঠোরভাবে লকড ডাউন মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ফজলে নূর বাপ্পি (মালয়েশিয়া) : এক সময় চট্টগ্রামের ফজলে নূর বাপ্পি জাতীয় পর্যায় উঠতি দাবাড়ু হিসেবে নিজেকে মেলে ধরলেও পরবর্তীতে এ অঙ্গন থেকে রীতিমতো হারিয়ে যান। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে এসে তিনি এখন ব্যবসায়ী বনে গেছেন।দীর্ঘ দিন ধরেই কুয়ালালামপুরে বসবাস করছেন। দেশে ফিরলে মাঝে মধ্যে তাকে আবার দাবা বোর্ডেও দেখা যায়। তিনি করোনা সর্ম্পকে জানান, মালয়েশিয়ায় কঠোরভাবে লকড ডাইন মানা হচ্ছে।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। ফলে কেউ সহজে বের হচ্ছেন না।তিনি জানান, এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের খোঁজ-খবর নিয়মিতই রাখছেন। তিনি ক্ষোভের সাথেই জানালেন, করোনার ক্ষেত্রে আমরা বাঙালিরা এতোটা উদাসিন যে, ভয়টা এখানেই!
শহিদুল ইসলাম হিরক (যুক্তরাজ্য) : যুক্তরাজ্যে এখনো করোনা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ নেই। দিন দিন এর প্রাদুভার্ব বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে মৃত্যুের মিছিলে যোগ হয়েছেন ১৪,৫৭৬ জন। তবুও যতসব চিন্তা-ভাবনা নিজ দেশকে ঘিরেই। বাংলাদেশ ভাল থাকুক, প্রিয় মুখগুলো ভাল থাকুক দূর থেকে এভাবেই শুভ কামনা করেন সাবেক দাবাড়ু শহিদুল ইসলাম হিরক। তিনি বলেন, শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই দেশবাসীকে সচেতন করার জন্য চেষ্টা করে আসছেন। কিন্ত আমাদের মানুষগুলোকে ঘরে ফেরানোই যাচ্ছে না। এরকম উদাসিনতায় যে কোন বড় ধরনের দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।কাজেই সবাই যদি কঠোরভাবে লকড ডাইন মেনে চলেন সেক্ষেত্রেই ঝুঁকিটা কমে আসতে পারে।এক প্রশ্নের জবাবে হিরক জানান, আমি লন্ডনে রয়েছি। এখানে করোনা পরিস্থিতি এখনো কন্ট্রোলে রয়েছে।সবাই লকড ডাউন মেনে চলছেন। এমন অলস সময়ে বাসায় এখন বই পড়ে, অনলাইনে দাবা খেলে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সময় কাটাচ্ছেন।
For add
For add
For add
For add
for Add