for Add
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২১ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার, ২০:৪১:১১
যে তার গতি ও নৈপূণ্য দিয়ে স্বাচ্ছন্দেই আপনাকে হারিয়ে দিতে পারে, তাকে আপনি কিভাবে থামাবেন? যে তার নিঁখূত পাস আর মনকে ভড়কে দেওয়া ড্রিবলিংয়ে খুব সহজেই রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেন, সেই জাদুকরকে আপনি কেমন করে বস করবেন?
আগামীকাল (বুধবার) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় কোপার শতবর্ষী আসরের সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র। অনুমিতভাবেই ম্যাচটা যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। কিন্তু বোস্টনের এই ম্যাচের পরিকল্পনা করতে গিয়ে উপরের প্রশ্নগুলোরই মুখোমুখি হতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আর্জেন্টনা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। দলটিতে আছেন এই গ্রহের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। শুধুই কী মেসি? মেসি ছাড়াও আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে রয়েছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরোর মতো প্রতিষ্ঠিত-প্রমাণিত স্ট্রাইকার। মেসি অ্যান্ড কোংকে আটকানোর ছক কষতে গিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের গলদগর্ম হওয়ারই কথা। ম্যাচপূর্ব গবেষণায় মেসি অ্যান্ড কোংকে রুখে দেওয়ার উপায় হিসেবে সম্ভাব্য একটা রাস্তাই দেখতে পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোচÑরক্ষণাত্মক কৌশল।
এমনিতেও রক্ষণই যুক্তরাষ্ট্রের মূল শক্তি। কলম্বিয়ার সঙ্গে ২-০ গোলে হার দিয়ে কোপার যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে এই রক্ষণ শক্তির জোরেই সেমিফাইনালে উঠে এসেছে ক্লিন্সমানের দল। পরিসংখ্যানে দৃষ্টি ফেরালেই বিষয়টা স্পষ্ট। কলম্বিয়ার কাছে দুই গোল খাওয়া যুক্তরাষ্ট্র সেমিতে উঠার পথে পরের তিন ম্যাচে হজম করেছে মাত্র একটি গোল। সেটাও সেট পিচ থেকে। বিপরীতে নিজেরা দিয়েছে ৭টি গোল।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও ক্লিন্সমান হাঁটতে চান নিজেদের জাল অঁক্ষত রেখে প্রতিআক্রমণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল নিয়ে। নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েও দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান কোচ। মেসির আর্জেন্টিনাকে যুক্তরাষ্ট্র ভয় পাচ্ছে না জানিয়ে ক্লিন্সমান বলেছেন, ‘অবশ্যই রক্ষণকেই প্রাধান্য দিতে হবে আমাদের। পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা রক্ষণে দারুণ করেছি। আমরা কোনো ফিল্ড গোল খাইনি। একটা মাত্র গোল খেয়েছি সেট পিচে।’ ক্লিন্সমানের বিশ্বাস সেমিফাইনালেও যদি রক্ষণটা এমন আটসাট রাখা যায়, আর্জেন্টিনাকে বধ করাটা সম্ভব হবে না, ‘আমরা কামড় বসাতে, লড়াই করতে সর্বোপুরি তাদের আটকে দিতে প্রস্তুত। যদি মাঠে ছেলেরা আগের ম্যাচের গুলোর পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করতে পারে এবং আরও ভালো কিছু যোগ করতে পারে, সেটা হবে দারুণ মজার, একই সঙ্গে উপভোগ্য।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন খেলায় আর্জেন্টিনাও হারে, ‘এমন নয় যে, তারা প্রতিটি ম্যাচেই জিতবে। তারাও ম্যাচ হারে। আশা করি আকর্ষণীয় একটা ম্যাচই হবে এটা।’
ক্লিন্সমান আশাবাদী মেসিকে ঠিকই আটকে দিতে পারবে তার শিষ্যরা, ‘এখন মেসির সময়। আমার যখন ম্যারাডোনার বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল, তখন ছিল ম্যারাডোনার সময়। আমরা এই ধরণের গ্রেট খেলোয়াড়দের প্রশংসা করি। তবে তাদের থামানোর উপায়ও আছে।’
প্রতিপক্ষের পাশাপাশি ক্লিন্সমানকে অবশ্য অন্য একটা বিষয় নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিয়মিত একাদশের তিন তারকা খেলোয়াড় জার্মেইন জোনস, আলেজান্দ্রো বেদোয়া এবং ববি উডকে পাচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের কোচ। ক্লিন্সমান এই ঘাটতিটা পুষিয়ে নিতে চানছেন অভিজ্ঞতা দিয়ে। যে কারণে ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলা ১০ জনকেই মাঠে নামাতে চাইছেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। অভিজ্ঞতা দিয়ে অভিজ্ঞ আর্জেন্টাইনদের মোকাবিলা করার পরিকল্পনা আর কী!
শুধু তো যুক্তরাষ্ট্রই নয়। প্রতিপক্ষকে নিয়ে সতর্ক আর্জেন্টিনাও। ইকুয়েডরের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথমার্ধে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর্জেন্টিনার কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর উদ্বেগটা সেখানেই, ‘ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমার্ধের খেলা দেখে আমি বেশি উদ্বিগ্ন।’ তবে সেই উদ্বেগ ঢেকে রেখে মার্টিনো দলকে তুলতে চান ফাইনালে। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ কোপা আমেরিকারও ফাইনালে খেলেছেন মেসিরা। আর্জেন্টাইনদের এখন চোখ টানা তৃতীয় ফাইনালের দিকে। আর সে পথে যুক্তরাষ্ট্রের বাধাটা টপকে যেতে চান নিজেদের সেরা খেলাটা খেলেই। মেসি যেমন বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ কী করল সেটা নিয়ে ভাবলে চলবে না। আমরা জানি, জিততে হলে আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। আশা করি, এই টুর্নামেন্টে আমরা সেভাবেই খেলছি।’
মেসির ইঙ্গিতটা পরিস্কার। দুর্দান্ত খেলেই সেমিফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। টানরা চার ম্যাচেই জয়। এই চার ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষকে দিয়েছে ১৪টি গোল, বিপরীতে খেয়েছে মাত্র দুটি। বোস্টনেও দল গোল করার সেই ধারাটা ধরে রাখবে বলে বিশ্বাস তার। গোলের ধারাটা ধরে রাখতে চাওয়ার অর্থ কিন্তুবার্সেলোনা তারকার নিজেরও গোল করা! বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলতে না পারলেও পরের তিন ম্যাচে মেসি করেছেন চার গোল। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে এক গোল করে ছুঁয়ে ফেলেছেন জাতীয় দলের জার্সিতে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। দুজনেরই গোল এখন সমান ৫৪টি করে। মেসির কাল সুযোগ থাকছে বাতিস্তুতাকে টপকে যাওয়ার। আর্জেন্টাইনরাও নিশ্চয় চাইছেন সেটাই। কারণ, জিতলে হলে মেসিকেই তো জ্বলে উঠতে হবে সবার আগে! মেসি পারবেন?
For add
For add
For add
For add
for Add